হযরত খাব্বাব (রাঃ)এর ইসলামের জন্য কষ্ট সহ্য করা

 হযরত খাব্বাব (রাঃ)এর ইসলামের জন্য কষ্ট সহ্য করা




শাবী (রহঃ) বলেন, হযরত খাব্বাব ইবনে আরাত্ব (রাঃ) হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ)এর নিকট গেলেন। হযরত ওমর (রাঃ) তাকে নিজের  আসনে বসিতে দিয়া বলিলেন, জমিনের উপর  এমন এক ব্যক্তিই  আছেন যিনি তােমার চেয়ে বেশী এই আসনে বসার হক রাখেন।

 হযরত খাব্বাব (রাঃ) জিজ্ঞাসা করিলেন, আমীরুল মুমিনীন, কে সেই ব্যক্তি? হযরত ওমর (রাঃ) বলিলেন, হযরত বেলাল (রাঃ)। হযরত খাব্বাব (রাঃ) বলিলেন, না, তিনি আমার চেয়ে  বেশী হক রাখেন না। 


কারণ মুশরিকদের মধ্যে হযরত বেলাল (রাঃ)এর পক্ষে এমন লােকও ছিল যাহার দ্বারা আল্লাহ তায়ালা তাহাকে রক্ষা করিতেন। কিন্তু আমার পক্ষে তাহাদের মধ্যে এমন কেহ ছিল না যাহার দ্বারা আল্লাহ তায়ালা আমাকে রক্ষা করিবেন।

 একদিন মুশরিকগণ আমাকে আগুন জ্বালাইয়া  উহার উপর রাখল এবং কেউ একজন পা আমার বুকের উপর  রাখিল। আমার নিজের পিঠ ব্যতীত সেই উত্তপ্ত যমীন হইতে নিজেকে রক্ষা করিবার আর কোন উপায় ছিল না। 

বর্ণনাকারী বলেন, এরপর হযরত খাব্বাব (রাঃ) নিজের পিঠের কাপড় সরাইয়া দেখাইলেন।  পিঠ আগুনে পুড়িয়া  সাদা হইয়া গিয়াছে। (কানযুল উম্মাল)


শাবী (রহঃ) বলেন, হযরত ওমর (রাঃ) হযরত বেলাল (রাঃ)কে তাঁহার প্রতি মুশরিকদের নির্যাতন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিলে হযরত খাব্বাব (রাঃ) বলিলেন, আমীরুল মুমিনীন, আমার পিঠের অবস্থা দেখুন।

হযরত ওমর (রাঃ) (তাহার পিঠ দেখিয়া) বলিলেন, আমি এইরূপ পিঠ কখনও দেখি নাই। হযরত খাব্বাব (রাঃ) বলিলেন, মুশরিকগণ আগুন জ্বালাইয়া আমাকে উহার উপর শােয়াইয়া দিয়াছিল। আমার পিঠের চর্বি গলিয়া সেই আগুন নিভিয়াছে। 

অপর এক রেওয়ায়াতে আছে, হযরত ওমর (রাঃ)এর নিকট  হযরত খাব্বাব (রাঃ) আসিলে তিনি বলিলেন, নিকটে আস, হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসির (রাঃ) ব্যতীত আর কেহ তােমার অপেক্ষা অধিক এই আসনে বসিবার অধিকার রাখে না।


 হযরত খাব্বাব (রাঃ) তাঁহাকে নিজের পিঠের উপর মুশরিকদের অত্যাচারের চিহ্ন দেখাইতে লাগিলেন। অপর এক রেওয়ায়াতে আছে, হযরত খাব্বাব (রাঃ) বলেন, আমি ছিলাম একজন কর্মকার । 

আস ইবনে ওয়ায়েলের কাছে আমার কিছু পাওনা পরিশোধের জন্য বললাম। সে বলিল, না, খােদার কসম, যতক্ষণ না তুমি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)কে অস্বীকার করিবে ততক্ষণ আমি তােমার পাওনা আদায় করিব না। 

আমি বলিলাম, না, আল্লাহর কসম, তুমি মরিয়া পুনরায় জীবিত হইবে তবুও আমি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অস্বীকার করিব না। সে বলিল, আমি মরিয়া পুনরায় জীবিত হইলে তখন তুমি আমার নিকট আসিও। 


সেখানেও আমার মাল-আওলাদ হইবে, আমি তােমার পাওনা দিয়া দিব। আল্লাহ তায়ালা তাহার এই কথার জবাবে কোরআনের আয়াত নাযিল করিলেন,

অর্থ ঃ আপনি কি তাহাকে লক্ষ্য করিয়াছেন, যে আমার নিদর্শনাবলীকে অবিশ্বাস করে এবং বলে, আমাকে অর্থ-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি অবশ্যই দেওয়া হইবে।

 সে কি অদৃশ্য বিষয় জানিয়া ফেলিয়াছে, অথবা দয়াময় আল্লাহর নিকট হইতে কোন প্রতিশ্রুতি প্রাপ্ত হইয়াছে? না, এরূপ কখনও নহে। সে যাহা বলে আমি তাহা লিখিয়া রাখিব এবং তাহার শাস্তি দীর্ঘায়িত করিতে থাকিব। 

সে যাহা বলে মৃত্যুর পর আমি তাহা লইয়া লইব এবং সে আমার নিকট আসিবে একাকী।

অপর এক রেওয়ায়াতে আছে, হযরত খাব্বাব (রাঃ) বলিয়াছেন যে, আমি একবার নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে দেখলাম। তিনি চাদরে হেলান দিয়া কাবা শরীফের ছায়ায় বসিয়াছিলেন। 

সেই সময় আমরা মুশরিকদের পক্ষ হইতে নিদারুন কষ্ট সহ্য করিতেছিলাম। আমি বলিলাম, আপনি আল্লাহর নিকট দোয়া কেন করিতেছেন না? নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ইহা শুনিতেই) সােজা হইয়া বসিলেন এবং তাঁহার চেহারা মুবারক রক্তিম হইয়া উঠিল।

 তিনি বলিলেন, তােমাদের পূর্ববর্তীদের মধ্যে এমন লােকও ছিল যে, লােহার চিরুনী দ্বারা তাহার হাড় হইতে গােশত খুলিয়া লওয়া হইত কিন্তু তাহাকে দ্বীন হইতে সরাইতে পারিত না। 


আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই এই দ্বীনকে পরিপূর্ণতা দান করিবেন। তােমরা দেখিতে পাইবে যে, সানআ হইতে একজন আরােহী হাজারা মাউত পর্যন্ত সফর করিবে।

তাহার অন্তরে আল্লাহ ব্যতীত আর কাহারাে ভয় থাকিবে না এবং তাহার বকরির পালের উপর বাঘের ভয় ব্যতীত আর কোন ভয় থাকিবে না, কিন্তু তােমরা তাড়াহুড়া করিতেছ।

Post a Comment

0 Comments