ইহুদীদের বিখ্যাত আলেম যায়েদ ইবনে সুনার ইসলাম গ্রহণের বিষ্ময়কর ঘটনা।

 ইহুদীদের বিখ্যাত  আলেম যায়েদ ইবনে সুনার ইসলাম গ্রহণের বিষ্ময়কর ঘটনা। 


Related search


সাহাবাদের জীবনী,

নবীদের জীবনী,

ইসলামিক গল্প,

হাদিসের উদ্ধৃতি, 

কুরআনের ঘটনা, 

ইসলামের ইতিহাস, 

ইসলামিক বই,

জান্নাত জাহান্নামে ঘটনা, 




 আল্লাহ তায়ালা যখন ইহুদি আলেম যায়েদ ইবনে সুনাকে যখন  হেদায়াত দিবেন তখন,   যায়েদ ইবনে সু'না নিজে নিজে  ভাবিতে লাগিলেন যে, হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রথম দেখেই, আমি নবুওয়াতের সকল নিদর্শন তাঁহার মধ্যে   পাইয়াছি। 

কিন্তু আমি দুইটি বিষয় এখনও অবগত হইতে পারি নাই। এক–নবীর ধৈর্য তাহার মূর্খতার উপর প্রবল হইবে। দুই—তাহার সহিত যতই মূর্খতাপূর্ণ আচরণ করা হইবে ততই তাঁর ধৈর্য বৃদ্ধি পাইবে।


একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের  হুজরা থেকে বাহিরে বের হলেন । তাঁহার সঙ্গে হযরত আলী ইবনে আবি তালেব (রাঃ) ছিলেন। এমন সময় তাঁহার নিকট একজন উদ্বারােহী আসিল। 

লােকটি দেখিতে বেদুইন মনে হইতেছিল। সে বলিল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! গ্রামে অমুক গােত্রে আমার কিছু সাথী ইসলাম গ্রহণ করিয়াছে। আমি তাদেরকে বলেছি যে, ইসলাম গ্রহণ করলে আল্লাহ  তাদের রিযিক বাড়িয়ে দিবেন।

 কিন্তু এখন তো সেখানে খুব অভাব দেখা দিয়াছে। ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমার আশঙ্কা হইতেছে যে, তাহারা যেমন রিযিকের লােভে ইসলাম গ্রহণ করিয়াছে, তেমনি আবার অন্য কোনো লােভের কারণে ইসলাম ছাড়িয়া না দেয়।

আপনি যদি ভালো  মনে করেন তবে তাদের জন্য কিছু সাহায্য করুন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁহার পাশে দাঁড়ানাে ব্যক্তির প্রতি তাকাইলেন। আমার মনে হয় তিনি হযরত আলী(রাঃ) ছিলেন। 


উক্ত ব্যক্তি এই দৃষ্টির অর্থ বুঝিতে পারিয়া বলিলেন,ইয়া রাসুলাল্লাহ, সেই মালামালের কিছুই তাে এখন আর অবশিষ্ট নাই।যায়েদ ইবনে সুনা  বলেন, আমি তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকটবর্তী হইয়া বলিলাম, 

হে মুহাম্মাদ, আপনি এখনই নগদ মূল্য গ্রহণ করিয়া অমুকের বাগানের এই পরিমাণ খেজুর এই তারিখের মধ্যে  পরিশােধ করার শর্তে আমার কাছে  বিক্রয় করিবেন কি? তিনি বলিলেন, কারো বাগান নির্দিষ্ট করিয়া বলিও  না।

 আমি বলিলাম, ঠিক আছে, তাহাই হইবে। অতএব তিনি রাজি  হলেন এবং আমি আশি মিসকাল স্বর্ণ  তাঁহাকে প্রদান করিলাম। তিনি সব মুদ্রা  আগত ব্যক্তিকে দিয়া দিলেন এবং  বলিলেন, এগুলো  দিয়ে সবার  সাহায্য কর এবং সবাই কে ভাগ করে দিও।


হযরত যায়েদ ইবনে সুনা (রাঃ) বলেন, নির্দিষ্ট মেয়াদের দুই তিনদিন আগে  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন হযরত আবু বকর (রাঃ),সাথে  হযরত ওমর (রাঃ) এবং  হযরত ওসমান (রাঃ) সহ আরো অন্যান্য সাহাবীদের নিয়ে একটা  জানাযার নামায পড়ালেন। 

নামাযের পর তিনি যখন একটি দেয়ালের পাশে বসিবার জন্য অগ্রসর হইলেন তখন আমি তাঁর  জামা ও চাদর ধরে অত্যন্ত রাগান্বিত হয়ে তাঁহার প্রতি চাহিলাম এবং বলিলাম, হে মুহাম্মাদ,আপনি কি আমার পাওনা পরিশােধ করিবেন না? খােদার কসম, তােমরা আবদুল মুত্তালিবের বংশ শুধু টালবাহানাই করিতে শিখিয়াছ।

 এমন সময় হযরত ওমর (রাঃ)এর প্রতি আমার চোখ পড়িতেই আমি দেখলাম  যে, রাগে তার চোখ বড় হয়ে  গােল আকাশের ন্যায় ঘুরতেছে।  তিনি আমার প্রতি চোখ বড় বড় করে তাকালেন এবং বলিলেন, “ওরে আল্লাহর  দুশমন,তুই আল্লাহর রাসূলকে কি  কথা বলিতেছিস যাহা আমি শুনিতেছি? 


আর তাহার সহিত এমন ব্যবহার করিতেছিস যাহা আমি দেখিতেছি? সেই পাক যাতের কসম, যাহার  হাতে আমার জীবন , যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর  মজলিসের আদবের কথা  না ভাবতাম তবে  আমার তলােয়ার দিয়ে এখনই তাের গর্দান উড়াইয়া দিতাম।

অপরদিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত শান্তসৌম্য দৃষ্টিতে আমার প্রতি চাহিয়া রহিলেন এবং (হযরত ওমর(রাঃ) এর কথা শুনিয়া) বলিলেন, হে ওমর! আমার ও তাহার ইহা অপেক্ষা অন্যকিছুর অধিক প্রয়ােজন ছিল। 

আমাকে তুমি ঠিক ভাবে  ঋণ পরিশােধের কথা বলিতে এবং তাকে বলতে সে যেন  ভালো করে তার  দাবী জানায়।  হে ওমর, তাহাকে লইয়া যাও এবং তাহার পাওনা দিয়া দাও।

আর তোমার  ভয় দেখানোর কারনে তাকে বিশ সা’ খেজুর বেশি  দিবে। হযরত যায়েদ (রাঃ) বলেন, হযরত ওমর (রাঃ) আমাকে লইয়া গেলেন এবং আমার পাওনা খেজুর দেওয়ার  পর আরো   বিশ সা’ খেজুর বেশি  দিলেন।


 আমি বলিলাম, হে ওমর! এই গুলো কেন দিলেন? তিনি বলিলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে আদেশ করিয়াছেন যে, আমি তােমাকে ভয় দেখানোর কারনে আরো অতিরিক্ত খেজুর যেন তোমাকে দেই ।

 আমি বলিলাম, হে ওমর! আপনি কি আমাকে চিনিতে পারিতেছেন? হযরত ওমর (রাঃ) বলিলেন, না। বলিলাম, আমি যায়েদ ইবনে সুনা। তিনি বলিলেন, ইহুদীদের সেই বড় আলেম? আমি বলিলাম, হাঁ, সেই বড় আলেম।

 তিনি বলিলেন, তুমি তো অনেক  বড় আলেম তাহলে তুমি  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে এমন ব্যবহার কেন করিলে? তাঁহাকে এইরূপ কথা কেন বলিলে? 

আমি বলিলাম, হে ওমর! আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেহারা মুবারক দেখিয়াই  উহার মধ্যে নবুওয়াতের সব নিদর্শন চিনতে পারিয়াছি।


 কিন্তু আমি দুইটি বিষয়ে নিশ্চিত হইতে পারি নাই। এক–নবীর ধৈর্য তাঁহার মূর্খতার উপর প্রবল হইবে। দুই—তাহার সহিত যতই মূর্খতাপূর্ণ আচরণ করা হইবে ততই তাঁহার ধৈর্য বৃদ্ধি পাইবে। 

আর এই দুইটাই আমি এখন যাচাই বাছাই  করে বুঝতে পেড়েছি যে উনি সত্য নবী । হে ওমর, আমি আপনাকে সাক্ষী রাখে  বলিতেছি যে, আমি ইসলাম কবুল করলাম । আর আমি আপনাকে সাক্ষী রাখিয়া বলিতেছি যে, আমি মদীনায় সর্বাপেক্ষা ধনী ব্যক্তি। 

সুতরাং আমার অর্ধেক মাল হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সকল উম্মতের জন্য দান করিয়া দিলাম। হযরত ওমর (রাঃ) বলিলেন, সকল উম্মত না বলে, বল উম্মতের কিছু অংশের জন্য , কারণ তােমার জন্য সকল উম্মতকে দেওয়া সম্ভব নয়। 


আমি বলিলাম, ঠিক আছে, উম্মতের কিছু অংশের জন্য দান করিলাম। তারপর  তারা  সেখান হইতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে আসিলেন, এবং যায়েদ ইবনে সু'না কালেমা শাহাদাত পাঠ করলেন। 

তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর ঈমান আনলেন, এবং  তাঁহাকে সত্য নবী বলিয়া মেনে নিলেন  এবং বাইআত হইলেন। 

তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সহিত বহু জেহাদে অংশগ্রহণ করিয়াছেন। অবশেষে তকূকের যুদ্ধেযাওয়ার সময়  তিনি ইন্তেকাল করেন। আল্লাহ তায়ালা হযরত যায়েদের প্রতি রহমত নাযিল করুন।

Post a Comment

0 Comments