খন্দকের যুদ্ধের রাসূল (সাঃ) ও সাহাবিদের আশ্চর্যজনক ঘটনা

 খন্দকের যুদ্ধের রাসূল (সাঃ) ও সাহাবিদের  আশ্চর্যজনক ঘটনা 




হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খন্দক খনন করিতেছিলেন। তাঁহার সাহাবা (রাঃ) ক্ষুধার কারণে পেটে পাথর বাঁধিয়া রাখিয়াছিলেন। 

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাদের এই অবস্থা দেখিয়া বলিলেন, তােমাদের মতে এ মন লােক আছে কি যে, আমাদেরকে একবেলা খাওয়াইতে পারে? এক ব্যক্তি বলল, জ্বি হাঁ, আমার জানা আছে। 


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেন, যখন আর কোন উপায় নাই, তখন তুমিই অগ্রসর হও এবং আমাদেরকে লইয়া চল।

অতএব তাহারা সেই ব্যক্তির ঘরে গেলেন, কিন্তু ঘরের মালিক ঘরে ছিল না, সে তো নিজের অংশের খন্দক খননের কাজে ব্যস্ত ছিল। তাহার স্ত্রী সংবাদ পাঠাইল যে, তাড়াতাড়ি আস, কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং আমাদের ঘরে আসিয়াছেন। 

সেই ব্যক্তি দৌড়াইয়া আসিল এবং বলিতে লাগিল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার পিতামাতা আপনার উপর কোরবান হউক । তাহার একটি বকরী ছিল এবং উহার একটি বাচ্চাও ছিল। সে (জবাই করার জন্য) দ্রুত বকরীর দিকে অগ্রসর হইল। 


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেন, বকরী জবাই করিলে উহার বাচ্চার কি উপায় হইবে? কাজেই বারী ওবাই করিও না। সুতরাং সে বকরীর বাচ্চা জবাই করিল এবং তাহার স্ত্রী সামান্য আটা লইয়া উহা শথিল এবং রুটি বানাইল।

ইতিমধ্যে গোশতের হাড়ি ও রান্না হইয়া গেল। তাহার স্ত্রী পেয়ালার মধ্যে রুটি ও গোশত দ্বারা সারীদ বানাইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁহার সাহাবা (রাঃ)দের সম্মুখে পেশ করিল।

 রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহাতে আঙ্গুল রাখিয়া বলিলেন, বিসমিল্লাহ, আয় আল্লাহ : ইহাতে বরকত দান করুন। তারপর সাহাবা (রাঃ) দেরকে বলিলেন,) খাও। 

সাহাবা (রাঃ) উহা হইতে পেট ভরিয়া খাইলেন, কিন্তু তাহারা উহা হইতে মাত্র তিন ভাগের একভাগ খাইতে পারিলেন, আরাে দুই ভাগ অবশিষ্ট রহিয়া গেল।


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সহিত যে দশজন সাহাবা ছিলেন তিনি তাহাদেরকে বলিলেন, যাও, তােমাদের ন্যায় আরাে দশজনকে পাঠাইয়া দাও । সুতরাং তাহারা চলিয়া গেলেন এবং অপর দশজনকে আসিলেন। 

তাহারাও অত্যন্ত পরিতৃপ্ত হইয়া খাইলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং ঘরের উক্ত মহিলা ও তাহার ঘরের সকলের জন্য বরকতের দোয়া করিলেন। তারপর তাহারা সকলে খন্দকের দিকে চলিলেন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেন, আমাদেরকে সালমানের নিকট লইয়া চল। সেখানে পৌছিয়া দেখিলেন, হযরত সালমান (রাঃ)এর সম্মুখে একটি কঠিন পাথর দেখা দিয়াছে যাহা তিনি ভাঙ্গিতে পারিতেছেন না।


 রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেন, আমাকে সুযােগ দাও, আমিই উহার উপর সর্বপ্রথম আঘাত করিব। সুতরাং বিসমিল্লাহ বলিয়া তিনি উহাতে আঘাত করিলে উহার এক-তৃতীয়াংশ পরিমাণ একটি টুকরা ভাঙ্গিয়া পড়িয়া গেল। 

তিনি বলিলেন, আল্লাহু আকবার, কা'বার রবের কসম, সিরিয়ার মহলগুলি জয়লাভ হইবে। তিনি পুনরায় আঘাত করিলে আরাে এক টুকরা ভাঙ্গিয়া পড়িয়া গেল। 

তিনি বলিলেন, কা’বার রবের কসম, পারস্যের মহলগুলি জয়লাভ হইবে। এই সময় মুনাফিকগণ বলিল, নিজেদের আত্মরক্ষার জন্য আমাদেরকে খন্দক খনন করিতে হইতেছে, আর তিনি আমাদের সহিত পারস্য ও রােম বিজয়ের ওয়াদা করিতেছেন। (বিদায়াহ)


 হযরত জাবের (রাঃ) বলেন যে, তিনি সাড়ে তিনসের যবের আটা দ্বারা রুটি বানাইলেন এবং একটি বকরীর বাচ্চা জবাই করিয়া সালন পাক করিলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দাওয়াত করিলেন। 

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খন্দকের সমস্ত লােকদের ডাকিয়া আনিলেন। তাহাদের সংখ্যা এক হাজার বা উহার কাছাকাছি ছিল। 


তাহারা সকলে সেই বকরীর বাচ্চা ও সামান্য পরিমাণ যবের রুটি দ্বারা পেট ভরিয়া খাইলেন, তারপরও খাবার যেমন ছিল তেমনই রহিয়া গেল।


Post a Comment

0 Comments