Class 6 BGS Assignment Answer 2022 2nd Week ( বাঙালির মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার কারণ এবং প্রতিরোধ আন্দোলন )
৬ষ্ঠ শ্রেণির অ্যাসাইনমেন্ট উত্তর
২য় সপ্তাহ
বিষয়ঃ বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়
শিরোনামঃ বাঙালির মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার
কারণ এবং প্রতিরোধ আন্দোলন।
ভূমিকাঃ
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ শুরু হয়েছিল, কিন্তু এর সমাপ্তি ঘটে ১৯৭১ সালের
ডিসেম্বরে চূড়ান্ত বিজয়ের মাধ্যমে। এ দিন পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস একদিকে যেমন করুণ শোকাবহ, লোমহর্ষক অন্যদিকে ত্যাগের মহিমায় মহিমান্বিত ও বীরত্বপূর্ণ।
(খ) বাঙালির মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার কারণঃ
নিচে বাঙালি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার ৪ টি প্রধান কারণ আলোচনা করা হলো--
বৈষম্যদূর ঃ: পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যা পশ্চিমের চেয়ে বেশি হওয়া স্বত্বেও সরকারি উন্নয়ন বরাদ্দে বৈষম্য ছিল পাহাড় সমান। পাকিস্তানের প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় (১৯৫০-
৫) কেন্দ্রীয় সরকারের উন্নয়ন বরাদ্দের মাত্র ২০ শতাংশ পেয়েছিল পূর্ব পাকিস্তান।
আরো দেখুন- ৬ষ্ঠ শ্রেণির প্রথম সপ্তাহের উত্তর-
তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ( ১৯৬৫-৭০) সেই বরাদ্দ বাড়লেও তা হয়েছিল ৩৬ শতাংশ । এক হিসাবে ২৫ বছরে পূর্ব থেকে পশ্চিমে পাচার করা টাকার পরিমাণ ছিল ২৬০ কোটি ডলার। এছাড়াও আরও অনেক বৈষম্য বিরাজমান ছিল যা লিখে শেষ করার মত নয়।
দেশকে শোষকের হাত থেকে রক্ষা করাঃ পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ আর্থ- সামাজিক রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে চরম শোষণের শিকার হতে থাকে ।এমনকি তারা আমাদের মুখের ভাষা বাংলাকেও কেড়ে নেয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।
আরো দেখুন- ৬ষ্ঠ শ্রেণির ২য় সপ্তাহের ইংরেজি উত্তর-
পূর্ব পাকিস্তানে শতকরা ৫৬ জনের মাতৃভাষা বাংলাকে উপেক্ষা করে পাকিস্তানি শতকরা ৭ ভাগ লোকের ভাষা উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করে। এ দেশের ছাত্র - জনতা তা মেনে নেয়নি । প্রচণ্ড বিক্ষোভে ফেটে পড়ে পূর্ববাংলার আপামর জনসাধারণ।
এই অশুভ ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে বাঙালিরা সজাগ ছিল বলেই ক্রমাগতভাবে একটা প্রতিরোধ গড়ে ওঠে পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে।পরবর্তীকালে এই প্রতিরোধই মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামে রূপান্তরিত হয়।
দেশকে পরাধীনতার গ্লানি থেকে মুক্ত করাঃ ২৫ শে মার্চ রাতে ইয়াহিয়া ঢাকা ত্যাগের পর পাকিস্তান পৌঁছানোর আগেই ঢাকায় গণহত্যা শুরু হয়। আর সেই রাতেই গ্রেপ্তার করা হয় বাঙালির নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে যাওয়া হয় পশ্চিম পাকিস্তানে।
কিন্তু তিনি গ্রেপ্তার হওয়ার আগে ২৬ শে মার্চ রাতের শুরুতেই ওয়্যারলেস বার্তার মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ডাক দিয়ে যান তিনি। আর আগে ৭ ই মার্চের ভাষণেই তিনি বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন , যার যা আছে তা নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে।
আরো দেখুন- ৭ম শ্রেণির প্রথম সপ্তাহের উত্তর-
১৯৭১ সালের এই ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ) মানুষের ওপর ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞ চালায় পকিস্তানি হানাদার বাহিনী।
এই ভয়াবহ ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে স্মরণ করে বাঙালি জাতি। এই রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ' অপারেশন সার্চ লাইট'র নামে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে বিশ্বের ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যা মেতে উঠে। অপারেশন সার্চ লাইট ছিল বাঙালির একটি প্রজন্মকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার এক নারকীয় পরিকল্পনা। পোড়া মাটি নীতি নিয়ে নেমেছিল পকিস্তানি ঘাতকরা।
আরো দেখুন - ৬ষ্ঠ শ্রেণির ৩য় সপ্তাহের উত্তর-
গ. প্রতিরোধ আন্দোলনের উপায় বর্ণনাঃ
মুক্তিযুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলনের ৪ টি উপায় নিচে তুলে ধরা হলো :
গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিরোধঃ ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে এই গেরিলাদের অবদান ছিল অনেক বেশি। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যখন মূল সড়ক , জাহাজ ও শহরে আস্তানা গাড়ত, তখন গেরিলারা অস্ত্র আর গ্রেনেড হাতে লুকিয়ে থাকত নৌকার ছইয়ের ভেতর , রাতের আঁধারে মাইন নিয়ে সাঁতরে গিয়ে সেটা লাগিয়ে দিয়ে আসত পাকিস্তানিদের জাহাজে। অতর্কিত হামলা-চালিয়ে উড়িয়ে দিত ব্রিজ , রেলপথ । দেখা গেল মাত্র চার - পাঁচজন গেরিলা যোদ্ধার ভয়েই তটস্থ থাকত গোটা একটা সেনাবহর।
বিভিন্ন আঞ্চলিক বাহিনীর মাধ্যমে প্রতিরোধঃ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দেশের অভ্যন্তরে বেশকিছু বাহিনী গঠিত হয়েছিল সম্পূর্ণ ব্যক্তি প্রচেষ্টায়। আঞ্চলিক এসব বাহিনীগুলো যুদ্ধের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেশের মধ্যে অবস্থান করেই পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলো।
যেমন- কাদেরিয়া বাহিনী , বাতেন বাহিনী, আফসার বাহিনী, হেমায়েত বাহিনী, হালিম বাহিনী প্রমুখ। তিনি বলছেন, এসব বাহিনীর অবদান যথার্থভাবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে স্থান পায়নি।
আকাশপথে প্রতিরোধঃ মুক্তিযোদ্ধারা স্থল , জলপথের পাশাপাশি আকাশ পথেও প্রচণ্ড আক্রমণ করে । অন্যদিকে বেহাল অবস্থা দেখে ' পূর্ব পাকিস্তান ' - এর পুতুল শাসক গভর্নর ডা. মালিক পূর্ব বাংলার মানুষের কাছে সাহায্যের জন্য আবেদন জানায়।মূলত বাংলাদেশ ও ভারতীয় বিমান বাহিনী ৩ ডিসেম্বর রাত ১ টায় বিমান হামলা শুরু করে এবং ৫ ডিসেম্বর এই হামলা বিধ্বংসী আকার ধারণ করে। বাংলাদেশে পাকিস্তানি বাহিনীর অধিকাংশ বিমান ধ্বংস করা হয় ।
মিত্র বাহিনীর প্রতিরোধঃ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ২১ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী এবং ভারতীয় মিত্র বাহিনীর সমন্বয়ে যৌথ বাহিনী গঠন করা হয়। তারপর ৬ ডিসেম্বর মিত্র বাহিনীর সমন্বয়ে যৌথ বাহিনী পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণ শুরু করে। এর ফলে বাংলাদেশেরবিজয় ত্বরান্বিত হয়।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলতে পারি অনেক ত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছে আমাদের দেশের স্বাধীনতা। তাই এই স্বাধীনতা রক্ষা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য।
আরো দেখুন - ৬ষ্ঠ শ্রেণির ৩য় সপ্তাহের উত্তর-
0 Comments