Class 9 History Assignment Answer 2022 4th Week- ইতিহাসের ধারণা,পরিসর ও ইতিহাস পাঠের প্রয়োজনীয়তা।
৯ম শ্রেণির অ্যাসাইনমেন্ট উত্তর
চতুর্থ-সপ্তাহ
বিষয়-ইতিহাস
শিরোনাম- ইতিহাসের ধারণা,পরিসর ও ইতিহাস পাঠের প্রয়োজনীয়তা।
Class 9 History Assignment Answer 2022 4th Week- ইতিহাসের ধারণা,পরিসর ও ইতিহাস পাঠের প্রয়োজনীয়তা।
ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারণাঃ ইতিহাস' শব্দটির উৎপত্তি 'ইতিহ' শব্দ থেকে যার অর্থ ' ঐতিহ্য'। ঐতিহ্য হচ্ছে অতীতের অভ্যাস, শিক্ষা, ভাষা, শিল্প, সাহিত্য - সংস্কৃতি যা ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষিত থাকে। এই ঐতিহ্যকে এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মের কাছে পৌছে দেয় ইতিহাস। ই এইচ , কার - এর ভাষায় বলা যায়, ইতিহাস হলো বর্তমান ও অতীতের মধ্যে এক অন্তহীন সংলাপ। বর্তমানের সকল বিষয়ই অতীতের।
ক্রমবিবর্তন ও অতীত ঐতিহ্যের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। আর অতীতের ক্রমবিবর্তন ও ঐতিহ্যের বস্তুনিষ্ঠ বিবরণই হলো ইতিহাস। তবে এখন বর্তমান সময়েরও ইতিহাস লেখা হয়, যাকে বলে সাম্প্রতিক ইতিহাস। সুতরাং ইতিহাসের পরিসর সুদূর অতীত থেকে বর্তমান পর্যন্ত বিস্তৃত। ইতিহাস শব্দটির সন্ধি বিচ্ছেদ করলে এরূপ দাঁড়ায়, ইতিহ + আস। যার অর্থ এমনই ছিল বা এরূপ ঘটেছিল। ঐতিহাসিক ড. জনসনও ঘটে যাওয়া ঘটনাকেই ইতিহাস বলেছেন। তাঁর মতে, যা কিছু ঘটে তাই ইতিহাস। যা ঘটে না তা ইতিহাস নয়।
গ্রিক শব্দ ' হিস্টরিয়া ' (Historia) থেকে ইংরেজি হিস্টরি (History)
শব্দটির উৎপত্তি , যার বাংলা প্রতিশব্দ হচ্ছে ইতিহাস। ‘হিস্টরিয়া' শব্দটির প্রথম ব্যবহার করেন গ্রিক ঐতিহাসিক হেরোডোটাস ( খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম শতক)। তিনি ইতিহাসের জনক হিসেবে খ্যাত। তিনিই সর্বপ্রথম তাঁর গবেষণাকর্মের নামকরণে এ শব্দটি ব্যবহার করেন, যার আভিধানিক অর্থ হলো সত্যানুসন্ধান বা গবেষণা। তিনি বিশ্বাস করতেন, ইতিহাস হলো যা সত্যিকার অর্থে ছিল সংঘটিত হয়েছিল তা অনুসন্ধান করা ও লেখা।
তিনি তাঁর গবেষণায় গ্রিস ও পারস্যের মধ্যে সংঘটিত যুদ্ধের বিভিন্ন বিষয় অনুসন্ধান করেছেন। এতে তিনি প্রাপ্ত তথ্য , গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এবং গ্রিসের বিজয়গাথা লিপিবদ্ধ করেছেন। যাতে পরবর্তী প্রজন্ম এ ঘটনা ভুলে না যায় , এ বিবরণ যেন তাদের উৎসাহিত করে এবং দেশপ্রেমে উদুবদ্ধ করে। হেরোডোটাসই প্রথম ইতিহাস এবং অনুসন্ধান- এ দুটি ধারণাকে সংযুক্ত করেন। ফলে ইতিহাস পরিণত হয় বিজ্ঞানে। পরিপূর্ণভাবে হয়ে ওঠে তথ্যনির্ভর এবং গবেষণার বিষয়।
প্রকৃতপক্ষে মানব সমাজের অনন্ত ঘটনাপ্রবাহই হলো ইতিহাস। ইতিহাসবিদ র্যাপসন বলেছেন, ইতিহাস হলো ঘটনার বৈজ্ঞানিক এবং ধারাবাহিক বর্ণনা। আধুনিক ইতিহাসের জনক জার্মান ঐতিহাসিক লিওপোল্ড ফন র্যাংকে মনে করেন, প্রকৃতপক্ষে যা ঘটেছিল তার অনুসন্ধান ও তার সত্য বিবরণই ইতিহাস। সুতরাং ইতিহাস হচ্ছে মানব সভ্যতার বিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিক ও সত্যনিষ্ঠ বিবরণ। সঠিক ইতিহাস সবসময় সত্যকে নির্ভর করে রচিত।
ইতিহাসের পরিসর বর্ণনাঃ মানুষ কর্তৃক সম্পাদিত সকল বিষয় ইতিহাসের আওতাভুক্ত। মানুষের চিন্তা - ভাবনা, পরিকল্পনা কার্যক্রম যত শাখা - প্রশাখায় বিস্তত , ইতিহাসের সীমাও ততদূর পর্যন্ত বিস্তত। যেমনপ্রাগৈতিহাসিক যুগের প্রথম পর্বের মানুষের কর্মকান্ড খাদ্য সংগ্রহের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। ফলে সে সময় ইতিহাসের পরিসরও খাদ্য সংগ্রহমূলক।
কর্মকাণ্ড পর্যন্ত বিস্তত ছিল। সময়ের বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ইতিহাস চর্চা ও গবেষণায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসৃত হচ্ছে। ফলে ইতিহাসের শাখা - প্রশাখার সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে, বিস্তত হচ্ছে ইতিহাসের সীমানাও। উনিশ শতকে শুধু রাজনীতি ইতিহাসের বিষয় হলেও মার্কসবাদ প্রচারের পর অর্থনীতি, সমাজ শিল্পকলার ইতিহাসও রচিত হতে থাকে। এভাবে একের পর এক বিষয় ইতিহাসভুক্ত হচ্ছে আর সম্প্রসারিত হচেছ ইতিহাসের পরিধি ও পরিসর।
মানবজীবনে ইতিহাস পাঠের প্রয়োজনীয়তা বিশ্লেষণঃ মানবসমাজ ও সভ্যতার বিবর্তনের সত্য,- নির্ভর বিবরণ হচ্ছে ইতিহাস। এ কারণে জ্ঞানচর্চার শাখা হিসেবে ইতিহাসের গুরুত্ব অসীম। ইতিহাস পাঠ। মানুষকে অতীতের পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান অবস্থা বুঝতে , ভবিষ্যৎ অনুমান করতে সাহায্য করে। ইতিহাস পাঠের ফলে মানুষের পক্ষে নিজের ও নিজদেশ সম্পর্কে মঙ্গল - অমঙ্গলের পূর্বাভাস পাওয়া সম্ভব সুতরাং দেশ ও জাতির স্বার্থে এবং ব্যক্তি প্রয়োজনে ইতিহাস পাঠ অত্যন্ত জরুরি।
জ্ঞান ও আত্মমর্যাদা বৃদ্ধি করে : অতীতের সত্যনিষ্ঠ বর্ণনা মানুষের জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। আর এ বিবরণ যদি হয় নিজ। দেশ - জাতির সফল সংগ্রাম ও গৌরবময় ঐতিহ্যের ,
তাহলে তা মানুষকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে। একই সঙ্গে আত্মপ্রত্যয়ী, আত্মবিশ্বাসী হতে সাহায্য করে। সে ক্ষেত্রে জাতীয়তাবোধ , জাতীয় সংহতি মুদৃঢ়করণে ইতিহাস পাঠের বিকল্প নেই।
সচেতনতা বৃদ্ধি করেঃ ইতিহাস জ্ঞান মানুষকে সচেতন করে তোলে। উত্থান-পতন এবং সভ্যতার বিকাশ ও পতনের কারণগুলো জানতে পারলে মানুষ ভালো- মন্দের পার্থক্যটা সহজেই বুঝতে পারে। ফলে সে তার কর্মের পরিণতি সম্পর্কে সচেতন থাকে।
দৃষ্টান্তের সাহায্যে শিক্ষা দেয়ঃ ইতিহাসের ব্যবহারিক গুরুত্ব অপরিসীম। মানুষ ইতিহাস পাঠ করে অতীত ঘটনাবলির দৃষ্টান্ত থেকে শিক্ষা নিতে পারে। ইতিহাসের শিক্ষা বর্তমানের প্রয়োজনে কাজে লাগানো যেতে পারে। ইতিহাস দৃষ্টান্তের মাধ্যমে শিক্ষা দেয় বলে ইতিহাসকে বলা হয় শিক্ষণীয় দর্পন।
0 Comments